@লেখক
হেলাল হাফিজের জীবনী
হেলাল হাফিজ (৭ অক্টোবর ১৯৪৮ — ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪) ছিলেন বাংলাদেশের একজন অন্যতম আধুনিক কবি, যিনি প্রেম ও দ্রোহের কবি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। ১৯৮৬ সালে তার প্রথম কবিতার বই "যে জলে আগুন জ্বলে" প্রকাশিত হয়, যা ব্যাপকভাবে আলোচিত হয় এবং এর ৩৩টিরও বেশি সংস্করণ প্রকাশিত হয়। দীর্ঘ ২৬ বছর পর, ২০১২ সালে তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ "কবিতা একাত্তর" প্রকাশিত হয়। তার অন্যতম জনপ্রিয় কবিতা "নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়", বিশেষ করে দুটি পঙ্ক্তি "এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়", বাংলাদেশের কবিতামোদী ও সাধারণ পাঠকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ২০১৩ সালে তাকে বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
হেলাল হাফিজের সাহিত্য কর্ম
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় হেলাল হাফিজ "নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়" কবিতাটি লেখেন। এই কবিতার পঙ্ক্তি "এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়" তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ব্যাপক সাড়া ফেলে। ১৯৮৬ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ "যে জলে আগুন জ্বলে" প্রকাশিত হয়, যা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয় এবং বহু সংস্করণ বের হয়। এর পর, ২০১২ সালে তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ "কবিতা একাত্তর" এবং ২০১৯ সালে তার তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ "বেদনাকে বলেছি কেঁদো না" প্রকাশিত হয়। হেলাল হাফিজের কবিতা, বিশেষত "প্রস্থান", "বিরহ", "চিরকুট" এবং "যে জলে আগুন জ্বলে", বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য স্থান অধিকার করে। তার কবিতায় প্রেম, দ্রোহ, বিরহ ও জীবনের যন্ত্রণা গভীরভাবে প্রকাশিত হয়েছে। "প্রস্থান" কবিতায় বিদায়ের ব্যথা, "বিরহ" কবিতায় বিচ্ছেদের কষ্ট এবং "চিরকুট" কবিতায় অতীত স্মৃতির আবেগ ফুটে ওঠে। "যে জলে আগুন জ্বলে" গ্রন্থে তার কবিতার অগ্নি জলেই মিশে যায়, যা পাঠককে এক নতুন অনুভূতির দিকে নিয়ে যায়। হেলাল হাফিজের কবিতায় মানবিক যন্ত্রণা, ভালোবাসা ও বিদায়ের মিশ্রণ তাকে বাংলা কবিতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
হেলাল হাফিজের কাব্যগ্রন্থ:
যে জলে আগুন জ্বলে (১৯৮৬), কবিতা ৭১ (২০১২, বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষায়), বেদনাকে বলেছি কেঁদোনা (২০১৯)
হেলাল হাফিজের কবিতা :নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়, নিরাশ্রয় পাঁচটি আঙুল, দুঃসময়ে আমার যৌবন, অস্ত্র সমর্পণ, অগ্নুৎসব, বেদনা বোনের মতো, ইচ্ছে ছিলো, প্রতিমা, অন্যরকম সংসার, নিখুঁত স্ট্রাটেজি, আমার সকল আয়োজন, হিরণবালা, দুঃখের আরেক নাম, প্রত্যাবর্তন, তীর্থ, অনির্ণীত নারী, অশ্লীল সভ্যতা, কবিতার কসম খেলাম, পরানের পাখি, বাম হাত তোমাকে দিলাম, উপসংহার, শামুক, আমার কী এসে যাবে, ইদানীং জীবন যাপন, পৃথক পাহাড়, অহংকার, কোমল কংক্রিট, নাম ভূমিকায়, সম্প্রদান, একটি পতাকা পেলে, মানবানল, যার যেখানে জায়গা, কবি ও কবিতা, ফেরিঅলা, উৎসর্গ, যেভাবে সে এলো, রাডার, যাতায়াত, যুগল জীবনী, লাবণ্যের লতা, তোমাকেই চাই, ভূমিহীন কৃষকের গান, কবুতর, নেত্রকোণা, তুমি ডাক দিলে, হিজলতলীর সুখ, রাখাল, ব্যবধান, কে, অমীমাংসিত, সন্ধি, ক্যাকটাস, তৃষ্ণা, হৃদয়ের ঋণ, প্রস্থান, ঘরোয়া, রাজনীতি, ডাকাত।
পুরস্কার ও সম্মাননা:
যশোহর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (১৯৮৬)
আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৭)
বাংলা একাডেমি পুরস্কার (২০১৩)
একুশে পদক (২০২৫, মরণোত্তর)
হেলাল হাফিজের মৃত্যু
হেলাল হাফিজ ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি দীর্ঘদিন গ্লুকোমা, কিডনি জটিলতা, ডায়াবেটিস ও স্নায়ু রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুর সময় তিনি ঢাকার শাহবাগের একটি হোস্টেলে বসবাস করছিলেন। বাথরুমে পড়ে যাওয়ার পর প্রায় ৩০ মিনিট পর তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় এবং হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হেলাল হাফিজের জীবনী, কবিতা, মৃত্যু, এবং সাহিত্যে অবদান আজও পাঠক সমাজের মধ্যে চিরকালীন স্মৃতি হয়ে থাকবে।
বার পড়া হয়েছে
বইসমগ্র