@লেখক
সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৪–১৮৮৯) ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্রের অগ্রজ। তিনি ঔপন্যাসিক, প্রবন্ধকার, সম্পাদক হলেও তাঁর শ্রেষ্ঠ পরিচয় ভ্রমণকাহিনীকার হিসেবে। তাঁর লেখা ‘পালামৌ’ (১৮৮০–৮২) বাংলাসাহিত্যের প্রথম সফল ভ্রমণকাহিনী, যা আজও পাঠকের কাছে সমান আকর্ষণীয়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই গ্রন্থের উচ্চ প্রশংসা করেন। তাঁর মতে, সঞ্জীবচন্দ্রের প্রতিভা ছিল ধনী, কিন্তু “গৃহিণীপনা”র অভাবে তা সুসংলগ্ন রূপে প্রকাশিত হয়নি। তবুও বর্ণনাশক্তি, ভাষার সৌন্দর্য, রসবোধ, প্রকৃতিপ্রীতি ও মানবিকতার কারণে ‘পালামৌ’ অনন্য। বইয়ের অনেক উক্তি বাংলা সাহিত্যের সম্পদে পরিণত হয়েছে—যেমন “বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃকোলে”।
বইটিতে শুধু সৌন্দর্য নয়, রয়েছে নৃবিজ্ঞানচেতনা, দেশপ্রেম, সমাজ-সমালোচনা ও দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি। মাঝে মাঝে লেখক প্রসঙ্গান্তরে গেলেও সেসব অংশে বাঙালি জীবনের সূক্ষ্ম বৈশিষ্ট্য ধরা পড়েছে।
সঞ্জীবচন্দ্রের জীবনে ছিল অস্থিরতা, আলস্য ও খামখেয়ালিপনা। তিনি সরকারি চাকরি করলেও বেশিদিন স্থায়ী হননি। পালামৌতে স্বল্পকালীন অবস্থান তাঁর মনে গভীর ছাপ ফেলে এবং সেই অভিজ্ঞতাই রূপ নেয় অমর ভ্রমণকাহিনীতে। তিনি বঙ্গদর্শন পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন, লিখেছিলেন ‘কণ্ঠমালা’, ‘মাধবীলতা’, ‘জাল প্রতাপচাঁদ’ প্রভৃতি উপন্যাস। প্রজাকল্যাণে রচিত Bengal Ryot বইয়ের জন্য সরকারি স্বীকৃতিও পান।
শেষ জীবনে তিনি নির্জীব, কর্মবিমুখ হয়ে কৃষ্ণনগরে মৃত্যুবরণ করেন (১৮৮৯)।
এক কথায়, ‘পালামৌ’ শুধু ভ্রমণকাহিনী নয়, এটি বাংলা গদ্যের সৌন্দর্য, দার্শনিকতা, সমাজদৃষ্টি ও মানবিকতার মিলিত রূপ—যা বাংলাসাহিত্যে এক অমূল্য নিদর্শন
বার পড়া হয়েছে
বইসমগ্র