@লেখক
জহির রায়হান (১৯৩৫-১৯৭২)
জহির রায়হান ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশী চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক এবং গল্পকার। তার কর্মময় জীবনে সাহিত্য ও চলচ্চিত্রের মধ্যে এক গভীর সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের গল্প শাখায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। তার কাজ বাংলা চলচ্চিত্র ও সাহিত্যে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তিনি ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার এবং ১৯৭৭ সালে একুশে পদক লাভ করেন। এছাড়া, সাহিত্যে তার অবদানের জন্য তাকে ১৯৯২ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়।
জহির রায়হান ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন মঈনুদ্দিন আহমদ, একজন সরকারি কর্মচারী। তার পরিবারের সদস্যরা সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী ছিলেন, এবং এটি তার লেখালেখির পথে তাকে উৎসাহিত করে।
তিনি তার প্রাথমিক শিক্ষা নেত্রকোনার স্থানীয় স্কুল থেকে লাভ করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে পড়াশোনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই তার সাহিত্যিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়।
জহির রায়হান তার সাহিত্যিক জীবন শুরু করেন ছোট গল্প লিখে। তার প্রথম উপন্যাস "শেষ বিকেলের মেয়ে" (১৯৬০) প্রকাশিত হয়, যা বাংলা সাহিত্যে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়। এর পরেই তিনি "হাজার বছর ধরে" এবং "আরেক ফাল্গুন" মত রোমাঞ্চকর উপন্যাস রচনা করেন। "হাজার বছর ধরে" উপন্যাসটির জন্য তিনি ১৯৬৪ সালে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।
তিনি তার গল্পগুলোর মাধ্যমে সমাজের নানা দিক, বিশেষ করে মানুষের মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক দ্বন্দ্ব তুলে ধরেছেন। তার লেখায় স্বাধীনতা সংগ্রাম, মানুষের সংগ্রাম, প্রেম এবং মানবতার সমস্যা প্রধান বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে।
জহির রায়হান ১৯৬১ সালে তার প্রথম চলচ্চিত্র "কখনো আসেনি" পরিচালনা করেন। চলচ্চিত্রের প্রতি তার আগ্রহ ছিল প্রগাঢ় এবং এই ক্ষেত্রে তার অবদানও ছিল বিশাল। তার পরিচালিত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হল "কাঁচের দেয়াল" (১৯৬৪), "বেহুলা", "সঙ্গম", "আনোয়ারা", এবং "জীবন থেকে নেয়া"।
তার চলচ্চিত্রগুলো সাধারণত সামাজিক সমস্যা, প্রেম, মানবাধিকার, এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের মতো গুরত্বপূর্ণ বিষয়কে কেন্দ্র করে ছিল। তার চলচ্চিত্র "কাঁচের দেয়াল" (১৯৬৪) প্রাপ্ত নিগার পুরস্কার তাকে আরও জনপ্রিয় করে তোলে। তিনি "স্টপ জেনোসাইড" নামে একটি প্রামাণ্যচিত্রও নির্মাণ করেছিলেন, যা বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছিল এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশংসিত হয়েছিল।
জহির রায়হান চলচ্চিত্রের মাধ্যমে দেশের সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে আন্তর্জাতিক স্তরে তুলে ধরেন। তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, নিগার পুরস্কার এবং মরণোত্তর একুশে পদকসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হন।
১৯৭২ সালে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জহির রায়হান হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে যান। তাঁর নিখোঁজ হওয়া আজও রহস্যময়। তবে, তাকে ১৯৭২ সালে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়, যা তার সাহিত্যে ও চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদানের জন্য। তার মৃত্যুর পর তার রচনা ও চলচ্চিত্র এখনো বাংলা সাহিত্য এবং চলচ্চিত্রের অমূল্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
বার পড়া হয়েছে
বইসমগ্র