অভিজিৎ রায় (১৯৭১–২০১৫) ছিলেন একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন প্রকৌশলী, ব্লগার, এবং লেখক, যিনি বাংলাদেশে মুক্তচিন্তা আন্দোলনের সাথে গভীরভাবে জড়িত ছিলেন।
জন্ম ও শিক্ষা: অভিজিৎ রায় ১৯৭১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আসাম, ভারতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকার উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজ থেকে শিক্ষা লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে যন্ত্রকৌশলে স্নাতক এবং পরবর্তীতে সিঙ্গাপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর ও ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করার আগে তিনি বুয়েটের প্রভাষকও ছিলেন। তার বাবা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. অজয় রায়।
ব্যক্তিগত জীবন: ২০০৭ সালে তিনি মুক্তমনা লেখিকা রাফিদা আহমেদ বন্যাকে বিবাহ করেন।
কর্ম ও লেখালেখি: পেশায় প্রকৌশলী হলেও তিনি লেখালেখির জন্য পরিচিত ছিলেন। তিনি বিজ্ঞান, নাস্তিকতাবাদ, ও যৌক্তিকতার ওপর ভিত্তি করে ১০টি বই প্রকাশ করেন, যার মধ্যে 'অবিশ্বাসের দর্শন' এবং 'বিশ্বাসের ভাইরাস' বিশেষভাবে আলোচিত।
মুক্তমনা ব্লগ ও প্রতিবাদ
মুক্তমনা: ২০০১ সালের দিকে তিনি সমমনা লেখকদের নিয়ে "মুক্তমনা" নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেন, যা মুক্তবুদ্ধি, বিজ্ঞানমনস্কতা, ও মানবাধিকার প্রসারে ভূমিকা রেখেছিল। এই ওয়েবসাইটটি 'দ্য ববস সেরা অনলাইন পুরস্কারের' জন্য মনোনীত হয় এবং ২০০৭ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতিপদক লাভ করে।
হুমকি ও প্রতিবাদ: তার আদর্শভিত্তিক রচনার জন্য তিনি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের কাছ থেকে হত্যার হুমকি পান। তিনি বাংলাদেশে সরকারের সেন্সরশিপ ও ব্লগারদের গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদের সমন্বয়কারী ছিলেন।
হত্যা ও বিচার
হত্যা: ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনি তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে নিয়ে অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির (TSC) নিকটে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রান্ত হন। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে অভিজিৎ রায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন এবং তার স্ত্রী বন্যা গুরুতর আহত হন (বাম হাতের আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়)।
দায় স্বীকার: বাংলাদেশী জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এই হামলার দায় স্বীকার করে।
তদন্ত ও বিচার: অভিজিতের বাবা ড. অজয় রায় শাহবাগ থানায় হত্যার অভিযোগ দায়ের করেন। হত্যাকাণ্ডের তদন্তে এফবিআই (FBI) বাংলাদেশের গোয়েন্দা দলকে সহায়তা করে। এই মামলায় ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অভিজিৎ রায়ের ইচ্ছানুসারে তার মৃতদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজে গবেষণার জন্য দান করা হয়।