@লেখক
শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ – ১৮ আগস্ট ২০০৬) আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একজন উচ্চাঙ্গের কবি, যিনি জীবদ্দশায় বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদা লাভ করেন। ১৯৫০-৬০-এর দশকে তিনি কবিমানদের মত দুই বাংলাতে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিমবঙ্গ) অবিভাজিত জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তাঁর আধুনিক কবিতা রূপালি স্নান প্রেমের ভুবন সঙ্গে বাক্ভঙ্গি ও নতুন অভিব্যক্তি নিয়ে আসে, যা ‘বুদ্ধদেব বসুর কবিতা পত্রিকা’-তে প্রকাশ পেয়ে আলোড়ন তুলেছিল।
জন্ম, শৈশব ও শিক্ষা
শাহাবুদ্দিন বাচ্চু রূপে পরিচিত শামসুর রাহমান জন্মগ্রহণ করেন ঢাকার মাহুতটুলি এলাকা এবং বড় হন নরসিংদীর পাড়াতলী গ্রামে। ১৯৪৫ সালে তিনি মেট্রিক পাশ করেন, পরবর্তীতে ঢাকা কলেজের আইএ কোর্সে ভর্তি হন, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএ ও এমএ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেও স্বীকৃতি পান।
সাংবাদিকতা ও সম্পাদকীয় কর্ম
১৯৫৭ সালে তিনি সামান্য বয়সেই দৈনিক মর্নিং নিউজ-এ সহ-সম্পাদক হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে নিয়মিত সাংবাদিক ও সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনে থাকেন—যেমন দৈনিক পাকিস্তান (১৯৬৪–৭৭) ও দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রা (১৯৭৭–৮৭)। সামরিক বাধায় ১৯৮৭ সালে পদত্যাগ করে তিনি মাসিক সাহিত্য পত্রিকা অধুনা এর সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন।
প্রতিরোধী ও স্বাধীনতার কবিতা
শামসুর রাহমান একাধিক সময়ে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে কবিতা লিখতে প্রচণ্ড সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন। তার লেখনীতে সমালোচনায় শাসক, প্রতিরোধে বীরত্বের বার্তা স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে—যেমন:
শিশুপ্রেম ও ছড়াবাণী
সংবাদপত্র ও রাজনৈতিক কবিতার পাশেই তিনি শিশু ও কিশোরদের জন্য লিখেছেন মধুর ছড়া কবিতা: ‘এলাটিং বেলাটিং’, ‘ধান ভানলে কুঁরো দেব’, ‘নয়নার জন্য’—যা তাকে শিশুবান্ধব কবি হিসেবে পরিচিত করে তোলে। তিনি ‘বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা’-র প্রতিষ্ঠাতা উপদেষ্টা ছিলেন ও শিশুবান্ধব মতামত ছড়িয়ে দিয়েছেন।
সাহিত্য ও কবিতা
শামসুর রাহমানের কবিতা ও কবিতার স্পষ্ট, সংবেদনশীল ভাষার জন্য তিনি আধুনিক কবি হিসেবে সুপরিচিত। সাত দশকের দীর্ঘ কাব্যজীবনে তিনি প্রকাশ করেন প্রায় ৬৬টি কাব্যগ্রন্থ, প্রকাশিত হয় উপন্যাস, ছোটগল্প, ছড়াসাহিত্য ও প্রবন্ধ—যেমন ‘অক্টোপাশ’, ‘নিয়ত মন্তাজ’ ইত্যাদি।
মৃত্যু ও উত্তরাধিকার
২০০৬ সালের ১৮ আগস্ট ঢাকায় তার মৃত্যু হয়। বনানীর কবরস্থানে তার চিরসমাধিস্থ হয়। মৃত্যুর পরেও কবি হিসেবে তার কবিতার ভাবগাম্ভীর্য ও সংবেদন শিল্পজগতে অম্লান রয়েছে।
উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা
বার পড়া হয়েছে
বইসমগ্র