@লেখক
রমেশচন্দ্র সেন (২২ আগস্ট ১৮৯৪ – ১ জুন ১৯৬২) ছিলেন একাধারে একজন প্রখ্যাত বাঙালি সাহিত্যিক, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক, এবং সংস্কৃত ভাষায় পারদর্শী পণ্ডিত। তিনি একদিকে যেমন আয়ুর্বেদের খ্যাতনামা কবিরাজ, তেমনি বাংলা সাহিত্যের একজন প্রভাবশালী ছোটগল্পকার ও ঔপন্যাসিক হিসেবে চিরস্মরণীয়। তাঁর লেখা "সাদা ঘোড়া" সহ অনেক গল্প বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে এবং আজও পাঠকদের মুগ্ধ করে।
জন্ম ও শিক্ষা
রমেশচন্দ্র সেন ১৮৯৪ সালের ২২ আগস্ট কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্বপুরুষের বাসস্থান ছিল বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার কোটালীপাড়ার পিঞ্জরী গ্রামে। তিনি ছিলেন খ্যাতনামা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক কবিরাজ ক্ষীরোদচন্দ্র সেন ও বরদাসুন্দরীর জ্যেষ্ঠ পুত্র। প্রাথমিকভাবে সংস্কৃত শিক্ষা নেন পিতার কাছে এবং পরে সীতানাথ সাংখ্যতীর্থের চতুষ্পাঠীতে অধ্যয়ন করেন।
পেশা ও সাহিত্যচর্চা
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় প্রতিষ্ঠা পেলেও রমেশচন্দ্র সেনের হৃদয়ে ছিল সাহিত্যের প্রতি গভীর আকর্ষণ। ১৯১৮ সালে মাদ্রাজে নিখিল ভারত আয়ুর্বেদ সম্মেলনে সংস্কৃত ভাষায় বক্তৃতা দিয়ে “বিদ্যানাধি” উপাধিতে ভূষিত হন।
সাহিত্যিক অবদান:
১৩১৮ বঙ্গাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন “সাহিত্য সেবক সমিতি”, যেখানে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, শিবরাম চক্রবর্তী প্রমুখ তার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি শুধু নিজেই লেখেননি, বরং তৈরি করেছেন বহু বাংলা সাহিত্যিক।
রমেশচন্দ্র সেনের গল্প ও উপন্যাস
রমেশচন্দ্র সেন তাঁর জীবদ্দশায় ১২টি উপন্যাস এবং ৭টি গল্পগ্রন্থ প্রকাশ করেন।
তাঁর রচিত বহু গল্প বাংলা সাহিত্যের সম্পদ, যেমন:
🔸 উল্লেখযোগ্য গল্পসমূহ:
সাদা ঘোড়া
মৃত ও অমৃত
তারা তিন জন
রাজার জন্মদিন
ডোমের চিতা
এই সব গল্প “রমেশচন্দ্র সেনের গল্প” হিসেবে পাঠক মহলে সুপরিচিত।
উল্লেখযোগ্য উপন্যাসসমূহ:
চক্রপাক (১৯৪৫)
কুরপালা (১৯৪৬)
কাজল (১৯৪৯)
গৌরীগ্রাম (১৯৫৩)
মালঙ্গীর কথা (১৯৫৪)
সাগ্নিক, নিঃসঙ্গ বিহঙ্গ, অপরাজেয়, পূর্বরাগ ইত্যাদি
তাঁর অনেক রচনা ইংরেজি, হিন্দি ও চেকোশ্লোভাক ভাষায় অনূদিত হয়েছে, যা তাঁর আন্তর্জাতিক গুরুত্বকে প্রতিফলিত করে।
ব্যক্তিগত জীবন
১৯১৬ সালে তিনি বনলতাকে বিবাহ করেন। তাঁদের পরিবারে ছিল পাঁচ পুত্র ও নয় কন্যা।
মৃত্যু
বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র রমেশচন্দ্র সেন ১৯৬২ সালের ১ জুন কলকাতায় পরলোকগমন করেন। সাহিত্য ও চিকিৎসাবিদ্যার দুই ধারায় তার অবদান তাকে স্মরণীয় করে রেখেছে।
(romesh chandra sen)
বার পড়া হয়েছে
বইসমগ্র